নাঈম ইসলাম : এই সুন্দর পৃথিবীতে যে বাবা-মায়ের জন্য আসা, যে বাবা-মায়ের পরম স্নেহ আর ভালোবাসা না পেলে বড় হয়ে নিজের সুখ এর স্বপ্নের কথা ভাববার এতটুকুন ক্ষমতাও আমাদের থাকতোনা সেই বাবা-মা কি কখনোই ভুলে যেতে পারে সন্তান ? জানি সবাই একবাক্যেই বলবেন ‘না’ । কিন্তু সবার ভাবনা এর ‘না’ কে তুচ্ছ করে দিয়ে এই চেনা-জানা পৃথিবীতেই আমাদের ধারে কাছেই সাম্ন্য স্বার্থের কারনে পরম আদরের সেই সন্তানেরাই যখন একজন বাবা/মায়ের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কিছুক্ষনের জন্য হলেও স্তম্ভিত হয় প্রতিটা মানুষের হৃদয় । যে পিতা তার সবটুকু উজার করে দিয়ে সন্তানকে দেখালো পৃথিবীর মুখ সেই সন্তানের নির্মমতাই যদি বাবার জীবনের পড়ন্ত বিকেলে অভিশাপ হয়ে পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত করে, মানতে কি কেও পারে ?
এবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় অসহায় বৃদ্ধ এক পিতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে চার পাষণ্ড সন্তান । নিহত ব্যক্তির নাম শরিফুল ইসলাম (৫৭)। তিনি পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন। শরিফুল ইসলাম সোমবার বিকেলে সন্তানদের হাতে পিটুনির শিকার হয়ে গতকাল বুধবার ভোরে মারা যান। এ ঘটনায় গোদাগাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম সংসারে নানা সমস্যা আর দন্দের কারনে উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম দু’বছর আগে জোসনা বেগম নামে এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করে, আগের স্ত্রী খাদিজা বেগম ও তাঁর চার ছেলে মেয়েকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেন। বিতাড়িত হয়ে প্রথম স্ত্রী খাদিজা বেগম পাশের গ্রামে এক আত্বীয়ের বাড়িতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে থাকতেন।
পরে গত সোমবার শরিফুল ইসলামের সন্তানেরা বাড়ির পাশে একটি জমিতে ঘর তুলতে গেলে বাঁধা দেন শরিফুল ইসলাম। এক পর্যায়ে ছেলে মেয়েদের সঙে তাঁর সংঘর্ষ বাঁধে।
এতে সন্তানদের পিটুনিতে শরিফুল ইসলাম গুরুতর আহত হলে তাঁর স্থানীয়রা তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাঁকে রাতেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় । পরে বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে আবারো অসুস্থ্য হয়ে পড়েন শরিফুল ইসলাম।
এসময় তাঁর সন্তানেরা তাঁকে আবারো রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকাবাসি বলছেন, বাবা হয়ত ভুল করেছিলেন, তাই বলে এমন নিষ্ঠুর শাস্তি দেয়ার অধিকার বা ক্ষমতা কি ছিলো সন্তানদের?
পরে বুধবার দুপুরে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এর আগে সকালে নিহতের মেজ ছেলে আবু সাঈদকে (২৭) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে নিহতের বৌমা শরিফা খাতুন (৩০), শিরিনা খাতুন (২৫) ও সজল আলী (২২) নামে নিহতের আরও তিন সন্তান।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, শরিফুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী জোসনা বেগম সন্তানদের আসামী করে বুধবার দুপুরে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছে।
0 comments:
Post a Comment
Welcome